শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০১৪

অহল্যা



নবান্ন বালিকাকে কৈশোরে হারিয়েছি—
তাই হয়তো মহুয়ার কুসুম নেশায়
ছুঁয়ে দেই, কামরাঙা নদী; তোমার আঁচল!
আবিষ্টতায় কখনো শূন্যে ভাসি
বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকি, কথা নিয়ে—
আঙুলের ভাঁজে আঙুল নিয়ে খেলা করি
আলতো ছোঁয়া, নম্র ও দীর্ঘ চুম্বনের স্বাদ নেই;
যে অব্যক্ত ভাষায় অনেক কথা বলে যাও—
তেমনি একদিন বললে, ‘আমাদের দিন আসবে’।
প্রতিটা দিন শেষে অপেক্ষা জমিয়ে বিকেল আসে
বিকেল জমিয়ে জমিয়ে আসে প্রতীক্ষা
প্রতীক্ষায় এখন বড্ড ধনী আমি!
এসে আমায় নিঃস্ব করো—

২২.০৮.২০১৪│১৫.৩৪│ ধানমণ্ডি

শনিবার, ২২ মার্চ, ২০১৪

││নবজীবনের কান্না││



সহসা কার্নিশে থমকে দাঁড়ালো
বিকেলের এক ফালি রোদ—
দৃশ্যটাকে বিষাদের আলপনা ভেবে নিলাম
কারণ আজ তোমার মন খারাপ!
জানালায় মলিন মুখে দাঁড়াতেই তা বুঝে নিয়েছি
মুহূর্তমাত্র পরেই সরল রেখাবেꜛর অধিক সত্যি
সন্ধ্যা নামবে, টিয়াগুলো উলুধ্বনি দিবে;
মানুষটি আজও এলো না—
নৈর্ব্যক্তিক বিকেলে তবু বেঁচেই থাকে বাঁচা
ধূপ সন্ধ্যার সিঁড়িতে একটি অপেক্ষা।
যে আবীর ছড়িয়ে গেলো গোধূলি
উনুনে চড়ানো বিকেলের লালিমায়
যে আগুনে পুড়েছিলো বাবার চিতা-ভস্ম
সে পোড়া চন্দনের গন্ধে, ভিড় থেকে উপকণ্ঠে
ডেকেছিলে কি না; তা আর মনে নেই
মনে আছে—
কর্তাল হাতে বেড়িয়েছে প্রজাপতি
ভ্রূণ যে আজ ছয় বছরের আত্মজা, আর তুমি?
‘ভিখারির হাসির মতো বৃষ্টি
বুক পাঁজরে লিখিত বিষাদ পুরাণ
দু’জনেই ভাতের মধ্য দিয়ে কেঁদে ওঠো
খেয়ে নিয়ে তাজা হিংসার ভিক্ষান্ন!’
এ ধুলোর বয়ানে পরিযায়ী চখাচখি জানে
কোথায় বিনাশ, অযাচিত ভ্রান্তিবিলাস; অথবা সুখ!
প্রতীক্ষার প্রবল মায়ায় ইন্দ্রজিতের শব্দবালক
উচাটন-আনমনা ঠিক এখন যেমন
    কিংবা তারপর—
অচ্যুত আর্তনাদে বাঁচবে মৃত চাহনির গ্লানি।

২২.০৩.২০১৪│০৩.৪৭│ ধানমণ্ডি

বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৩

শুনছো

কড়িকাঠে কে যেন আমায় গেঁথে দিয়েছিলো, রশিতে শিকে ঝোলাবে বলে। সেই থেকে আমি পূর্ব পুরুষের সাক্ষী হয়ে ঝুলে আছি আর আমার শিকেতে ঝুলানো করোটিতে খুব যত্ন করে বৌ-ঝি’রা দৈ পাতছে। আমার দেহে আজ কত ঝঙ ধরেছে কে তার খবর রাখে? কোনো একদিন হয়তো ভার সইতে না পেরে ভেঙ্গে পড়বো। তবে এখন প্রাণ দিয়ে যত্ন করছে বলেই পুই উঠেছে লতিয়ে দেহ। ভালো লাগে না এসব নিয়ে ভাবনা করতে। উদাসী হয়ে গিয়েছি বাউলিনী তোমার টানে। দু’চোখে নি:স্পৃহার অন্ধ আলো জ্বেলে তাকিয়ে থাকি অনিমেষ, সাপের চোখের মতো হতে পারে কারণ পলক ফেলতেও আজকাল ভুল হয়ে যায়। ভালো লাগে না কিছুই। কেনই বা লাগবে বলো? আমিতো চাইনি ভালবাসা ছুঁয়ে দিতে। বেশ তো ছিলাম সামন্ত প্রভু হয়ে। যেই না তুমি বললে— ‘ভালোবাসি একদম নি:স্বার্থ ভালবাসা, কোনো বিনিময় চাই না, কোনো দেবতা সংহতি নেই আমার। কোনো বেড়াজালে আবদ্ধ রাখবো না তোমাকে লেখা-ঝোকা সংবিধানে।’ আমি অবাক হয়েছি জেনে। তুমি খুবই মৌনতায় এক তরফা ভাবে ভালবেসে গিয়েছো গত দু’টি বছর। আমাকে বুঝতে দাওনি, অথচ নজর রেখেছো সুখ দু:খের সাথী হয়ে। আমি টের পাইনি। কেমন করে পারলে আমার সব কিছু ওলট পালট করে দিয়ে দূরে সরে যেতে! জানি খুব দূরে তুমি নও আড়ালেই আছো, ডাকলেই চলে আসবে। সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে লজ্জা আনত দৃষ্টি মেলে দিয়ে অবাক হয়ে বলবে- ‘এই তোমার ডেকে নেবার সময় হলো?’ আমি অবাক তাকিয়ে রইবো বলে অপেক্ষায় থাকি।

সেই জলের হাওয়া নেই অদ্রি। নিঘাধ শুকনো দাঁড়িয়ে থাকি। আমার এখন কিছুই ভালো লাগে না। বিরক্ত নিজের জীবনের প্রতি। অথচ এমন কথা ছিলো না। যোগাযোগ হয়তো হবে না কয়েকদিন। ছুঁয়ে হয়তো দেখবো না উত্তর মেরুর হিম। সুবাস টেনে নিবো না শিউলির শুভ্রতায় অনাঘ্রাত কুসুম। কৈ আর হয় বলো? তুমি বাসা বদলাবে বলে একদম যোগাযোগটাই বন্ধ করে রাখলে। ফোনের এক নাম্বার দিয়েছো যার অপারেটর বড্ড বেরসিক; বারবার তোতাপাখির বুলি আউড়ে যায়— ‘লিভ আ মেসেজ- লিভ আ মেসেজ’। আমার যন্ত্রের কাছে হেরে যেতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে না উড়ে যাই তোমার ঠিকানায়, কি করেই বা যাবো বলো? তোমার যে ঠিকানাটাই আমি জানি না। জানতে চাইনি কোনদিন। তোমার ও জানাবার প্রয়োজন অনুভূত হয়তো হয়নি। আমি অধিকার নিয়ে দাঁড়াবো না এমন শর্তেই তোমার সুখ ছিলো। আমিও অধিকার ফলিয়ে আমার হও নিবেদনের ভঙ্গিতে হাঁটু মুড়ে বসিনি কখনো তোমার জানুদেশে। তবে অপেক্ষা করতে ভালো লাগে, ভালো লাগে ট্রেনের হুইসেল, স্টিমারের ভেঁপু রিক্সার টুং টাং। মাঝেমধ্যে নস্টালজিক হয়ে পরি, গেটের কাছে কোন গাড়ি এসে দাঁড়ালে টিকটিকিটার ভয় কাঁপানো দু:সময় দুরুদুরু মনের ওঙ্কারে গুনগুনে গীত গায়- ‘এই বুঝি এলে মোর দ্বারে।’ হয় না, মেলেনা মিলানো। তবু অপেক্ষায় থাকি।

ভাবনায় ভেসে যাই, তবু গোধূলির লালিমা কখনোই ঘর পোড়া গরুর কথা মনে করিয়ে দেয়নি। জানি ঝাড়ের ভাষায় ক্ষমা নেই। জানি নি তবু তোমার মন। ডুব দিয়ে স্নান করা হলো না তোমার দীঘির জলে। হবে হয়তো কোন একদিন। অপেক্ষায় থাকি। গ্রীবাভঙ্গির সন্ত্রাসে ভেরি বাজে, গনগীত অস্ত্রের গান, ত্রস্ত জনপদ দৌড়ে পালায়, রক্ত প্ররোচনার বসন্তে নির্মেঘ বজ্রে যে বাজে; তাহাকে এখন সম্যক চিনি না। আমি খুঁজে পাইনি সে পথ যে পথে গিয়েছে চলে সব সন্ত। ভ্রান্তি জাগে মনে, হৃদয়ে কুহক-পঞ্চম দ্বন্দ্ব, একলা একা ঘুরেছিলাম জনান্তিকে, রাজপথের চৌমাথা, ঝরা-পাতার বিজ্ঞপ্তি ফলকে। বোঝেনি কেউ প্রার্থনার শরণ তাই আমিও বুঝিনি নারী মন। সে আজো আঁকাবাঁকা-ভঙ্গুর। রাতের গভীরে এখনও সেজদার মাজারে ডুব দেয় পুণ্যশ্লোক; রূপ ছিটকে পড়ে, রূপ তোমার ভয়াতুর- লঘু করে যা ধমনীর সঞ্চালন। অনুভব করি, চিৎকার করে কান্না করি বাথরুমে বা একলা থাকার নির্বাসনে, কখনো জোছনার ছাদে, রমণের গভীরতর কোমায়। কোন কোন বৃষ্টিরদিন অনেক দীর্ঘ হয়, হয়তো সে সময়ের মাঝে দীর্ঘতম আলোর দিনটিও অনুপ্রবেশ করে সুখের কান্নায়। আলোর দীর্ঘতায় প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়, তবু সে দিন বৃষ্টিপাত হয় অনেক দীর্ঘ সময়, যতক্ষণ মেঘ-কান্নার জল থাকে। আমি অপেক্ষায় থাকি।

অমিত্রাক্ষরদের বাড়ির পাশ ঘেঁষা যে আল পথটি আছে সেখানে দিয়ে বাক্যের দীর্ঘ পথ হেঁটে গেলেই গঞ্জের পাশে গড়ে ওঠা নতুন কবিতাদের গ্রামে যাওয়া যায়, সজনে গাছটা তখন পথের পাশে থেকে বেশ ছায়া দেয়, গাছের বোঁটা থেকে সজনের মতো দীর্ঘ পঙক্তিগুলো ঝুলে থাকে— ‘ভালোবাসা তোমায় ভালোবাসি।’ আমি শব্দের ছায়ায় সময় পেলেই বিশ্রাম করি আর... আর অপেক্ষায় থাকি, তুমি ডেকে নিয়ে বলবে আমার হও। আমি অপেক্ষায় আছি অদ্রি।

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৩

ঘামগন্ধে স্নাত পিঁপড়া



পরিচয়হীন নষ্ট স্রোতে জন্ম নিলো অপুষ্টির গর্ভাশয়ে চিৎকার
সাবধান না হওয়া সর্বনাশের পেটের ভেতর জন্মানো দু:খের ভ্রূণ
ভুলেছি তার নাম বা ধরে নিতে পারি ‘রেজরে না থাকা সেফটি
সঘর-অঘর প্রভেদ না খোঁজা কালো কাপড়ে বাঁধা চোখ যা দেখেনি
দেখেনি সরকার, জানেনি ক্ষমতা, শোনেনি রায়
পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা হলো, ঘোলা নদী কান্নার শ্লোগান
ফুটপাথ ধরে হেঁটে গেলেই যা লালিত অযত্নের স্বপ্নবাজ
কাঁপিয়ে দেয় ভূতল- ঝাঁকুনি দেয় ‘খোদার আরশ আসন ভেদিয়া
তখন কেঁপে ওঠা ঈশ্বর বিড়ালের হুংকারে বলে- ওদের ধরো
প্রজন্মের প্রমাণিত নাম অংকনের সিল-গালা মারো
তাই কি হয় বলো!
লজ্জাগুলো কিষানের কাস্তে আর কুমারের হাপরের তলায় হাসে-
এসব এখন রাষ্ট্রের গুদামে জমানো ধানের দুধ
দুর্ভিক্ষের উল্লাস সেলাই করা জঠরে অন্নের পরিতোষে ভাত
বসন্তের মরা পাতা গন্ধবুকে বৈশাখী ঝড় তুমি মৌসুমি ভগবান
‘যুক্ত করো হে শান্ত ফাঁসির দাবী, বটের ঝুড়ি নুলো জগন্নাথ!
বেঁচে থাকবো আমি তোমার দেহে সমান্তরাল বিচরণ কাচপোঁকা
দুইবেয়ারা ঘুণের পাল্কিতে কাচপোঁকার গায়ে ভীষণ প্রেমজ্বর- জরা

মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

মেলা


মাঝরাতের আকাশটা ঝকঝক করছে তারার মেলায়। গাঢ় অন্ধকার চারপাশে তাই হয়তো আকর্ষণটা আরো রহস্যময় হয়ে উঠছে। যে কারণে গাড়ির শীতলতা থেকে বেড়িয়ে আকাশে দৃষ্টি ফেলে দাঁড়িয়েছি। কত বিচিত্র রঙের খেলা মহাশূন্য জুড়ে! কি আছে ঐ অজানা সাজানো হীরকদ্যুতির মেলায়, কখনোই হয়তো জানা হবে না সে’ অযুত লক্ষ নক্ষত্র তারকারাজির কথা। দূর থেকে যা বহু দূর! শত আলোক বর্ষ দূরের সে জগত!

জানা হয়নি আমার মানুষটির মন আজও অবিকল ঠিকঠাক গড়নে আছে কি’বা নাই, যে থাকে হয়তো পৃথিবীর পরে, ধুলোর ভুবনে। স্থানাঙ্কে সে কোথায় জানি না। আছেই জেগে হয়তো আশে পাশে। তবু আমি তাকে খুঁজে ফিরি ধরাধামের বিদ্যাপীঠে, আর এক সময় টের পাই বাস্তবতা বড্ড কঠিন। তখন আমার নাসারন্ধ্র বেয়ে উঠে আসে হিম বাতাসের নোনা ঢেউ, মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছড়িয়ে যায় সুতীক্ষ্ণ শীতল যন্ত্রণার সাইরেন। রোমকূপের প্রগাঢ় পেলব অনুভবে টের পাই শৈত্যপ্রবাহের কনকনে শীতের হুল, অসাড় করে তুলে হাত-পা, যদিও পাই চেতনা জগত আজো সবল। আহরণ করতে চাই অচেনার সকল স্বাদ-গন্ধ-শব্দ অথচ হিম কুয়াশার মতো আলতো পরশের চাদর জড়িয়ে যায় আমার শরীরে ইচ্ছে স্রোত, খামচে ধরি পিঠ, কুঁড়ে-কুঁড়ে খেতে চাই ধনুক বাঁকানো মেরুদণ্ড। কিছুই করা হয়ে ওঠে না, অসহ্য যন্ত্রনায় একটা সময় কুঁকড়ে যেতে যেতে নিজেকে ভ্রূণ বানিয়ে ফেলতে গিয়ে একসময় বিশভ্রহ্মাণ্ডের রহস্য জগতের সুর ভাজি, তাতে আমি নিজেরই রহস্যময়তার অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়ার দরজা খুলে যাওয়া টের পাই। এখনও সময় হয়নি বলে, আমি তার ছায়ার দিকে তাকিয়ে উত্তপ্ত ঘরের দরজা খুলে ঢুকে যাই ভাবনাকে বুকপকেটে জড়িয়ে। এমনি করেই রাত কাটে— স্বপ্ন ঘোর।

রাতের পরে ভোর আসে। এক যুগ আগে উদয় হওয়া সূর্যের রং আর আজকের সূর্যের রং এক নয়। আজকে মাটির অনেক কাছে আছি, একাকী আছি অনেক দিন যাবত ই কিন্তু তোমার থেকে খুব বেশী দূরে নয়। এখানে যে উদ্দেশ্যে আসা সেটা মনের এক বিবর্ণতা থেকে চাওয়া সাধ- যা লুপ্ত ছিলো মনের গহীনে, অবুঝ চেতনাগুলো সবসময় যেমন নীরবতায় লুকিয়ে থাকে তেমনটি নয়। হয়তো লিখে বোঝাতে পারি না দহনের কাষ্ঠপোড়ায় হৃদয়তলে জমেছে কত কালি, দেখাতে পারি না সময়ের প্রতিঘাতে অনুভবের আঙিনায় ধুসর বায়ুর প্রবাহ কতটা পাণ্ডুর আর তুমিও জানবে না কখনোই, শুষ্ক স্রোতে বয়ে যায় আমার অশান্ত চোখে একাকী কতশত নীরব বিপ্লব, জীবনহীন তানের সুরে বাজে প্রাণ, বেতান করুণ কিন্নরী। জানিস্ অণিমা! আজকে সূর্য ডোবার পরই দিনটি ফুরিয়ে যাবে; বছর ঘুরে হয়তো এদিনটি আসবে। হয়তো আজকের দিনটি নিয়ে যাবে আগামীর এ দিনটির কাছে। তবু এই যে এখানে আছি, দিন কাটে উদাস, মনে বৈকালিক হাওয়া, দূর্বাঘাসে ছড়িয়ে দিয়ে পা। এ খুবই উচ্চমাপের বিড়ম্বনা। মাঝে মাঝে বৃষ্টি আসে এখানে, আমি ভিজে যাই, ভেজে আমার চুল, চিবুক, গাল। ভেজা পথে পায়ের ছাপ পড়ে আর তা আঁকতে আঁকতে চলে যাই বহুদূর। একসময় হঠাৎই টের পাই আমার এ সমস্ত ভেজা শরীর জন্মের বাস্তবতা আর বৃষ্টি হলো প্রকৃতির আত্মা। তখন নিজের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় জাগে, কিন্তু মাধুরী-বৃষ্টি? তাকে মনের অতলে একটু খানি জায়গা নিয়ে লুকিয়ে রাখি। বৃষ্টি বাঁধ না মানতে চাইলে চোখের কোনো পর্যন্ত এসে যায়, তবে কখনোই শরীর ভিজিয়ে দিতে পারে না। তবু এতোসব সমস্যার রানী থামাতে পারেনি হৃদয়ের মধ্যে টগবগ টগবগ করে ছুটে চলা দুর্বিনীত উচ্ছ্বাস।

যা এখন কেউ জানলেও বা না-জানলেও আমার কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না। হয়তো এই অ-দেখাদেখি’তেই জীবনের বেলা ফুরিয়ে যাবে, অদেখার মাঝে নিয়তির ভবিষ্যৎ পরে থাকবে অচল পয়সার মতো। তাইতো বন্ধ সিন্ধুকের কোণে প্রহর গুনি সমাজের বেহিসেবী তালে-রঙে যা অসম্ভব আর বেশ বেমানান। অহর্নিশ জীবনের নামে কতই না বলি হয় জীবনের পাপ-পুণ্য। কে তার খবর রাখে? আজ ছেঁড়া পাদুকার মত সময়কে ছুড়ে ফেলতে পারি দুয়ারের বাইরে তোরই অস্তাচলে- আঁধার যে করেছি আপন! দখিনা বাতাসের চটুল ঘূর্ণি আমার বাতায়নে এসে হাহুতাস করে কেঁদে মরে আমি বলি- ধুর পাগলী, চিন্তা করিস না, নিয়তির শৃঙ্খল খুব সহজেই যায় না ভেঙ্গে ফেলা। তার চাইতে অধিক জোড়ে হেসে ঘুণে ধরা চৌকাঠ কাঁপাই- দেখ্ অণিমা আমার চোখের আঙিনায় কত হীরা-মানিক স্বপ্নহীন খেলা করে, কত তৃষ্ণা বিতৃষ্ণার দহন বিষাদ পুলকের ঢেউ তোলে। তাই হৃদয়ের কথা নিয়ে কোনো আবেদন করি না, কোনো হাহাকারের প্রতিশব্দে গুঞ্জন তুলি না, নেই কোনো অনুযোগ, অভিলাষের মৃদুমন্দ মায়ার দোলা উড়াই না চপল বধূর আঁচল, নেই কোনো আকাঙ্ক্ষার খরগ্রোতা আবেগের বান, কোনো অভিযোগ নেই, কোনো আষাঢ়-শ্রাবণের আমাবস্যা নেই, নেই কোনো রাতের বিরহী ঘ্রাণ অথবা অবিকশিত ফুলের ঝরে যাওয়া রোদন। দেখাবো না কখনো অদেখা তৃষ্ণার বানে কতটা রিক্ত ’এ প্রাণ, নয়নের জল নয়নে লুকিয়ে বরং দীর্ঘশ্বাসের দহনে জ্বালা মেটাবো তবু বলব না আমার হৃদয় তলে চুপটি করে বস্। 

এখন অগ্রহায়ণের আহ্লাদী পরানে বলি- ওহে দখিনা বাতাস, যা বয়ে যা সুখের আঙিনায় যেথায় পাঁচমিশালী সুখের পসরা বসায় নিত্যদিনের বাজার। কাশবনের মত হাওয়ায় ছুঁইয়ে দে মনের পরতে পরবে রঙধনু, শুভ্রমেঘের আলপনায় স্বপ্নসখী আঁকুক তুলিতে; স্বপ্ন বাসর। পোয়াতী পালে ভাটিয়ালের সুর মুছিয়ে দিক ভরাট গলার আবৃত্তি। শুক্লপক্ষের আমাবস্যা আমার থাকুক, এইতো আমার প্রাপ্তি, এইতো আমার কামনার সুখ, আধার রঙে দুঃখ তরুর বল্কল খসা ভঙ্গুরছাপ বেশ মানিয়েছে এ জীবনের গহীনতর উপলব্ধির অনুপ্রাণনে; তুই বরং আসিস না।মনে করিস না- ধরার জগতে এ মরার প্রলাপ।মনে করিস- এ ছিলো কোনো এক নষ্ট মনের অকারণই দুখ:বিলাস। অঞ্জন সাজে নয়নের বিজন কালো বাজিয়ে যাক অতৃপ্ত সুরে এক অভিলাষী ধৃষ্টতার বৈরাগী একতারা, আমি যে আর কেখনোই সুর হতে পারবো না!!!