মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১

দুঃখের আনুপাতিক সুখ

অণিমা তুমি আক্ষেপ করছিলে স্বপ্ন সূর্য ঢলে পড়া যৌবনবতী সন্ধ্যার যখন হ্যারিকেনের আলোটা কেরোসিনের অহমিকা দেখায়, তবু তুমি দেখাতে পারো না গৌরাঙ্গের বিলাস। আমি সে কথা শুনে বেদম হাসিতে কাঁপাই ঘুণে ধরা চৌকাঠ, বলি আরে বোকা, তুমি যে ভালবেসেছও। ভালো লাগা যজ্ঞে শরবিদ্ধ তোমার অন্তঃপুর, অনংশিত চিত্তে আজো যা অচ্যুত।।

সময়ের অবসর ভাবনায় ফেলে, তবে কি পর্ণকুটিরে সুখ নৃত্যের উল্লাস হয় না, ঢলে কি সঞ্জীবনী উড়কি রাতের গহীনে পতিত ভূমে? নিত্য দেয় কি ক্ষুৎ চুম অন্ন-তৃষ্ণা? হবেও বা, তেল-নুনের আহারেও আজ দ্রব্যমূল্য এক হাত নিচ্ছে. তবু বলবো নিদ্রান্বিতয় লাস্যময়ী মৃগতৃষ্ণিকা বিদ্রূপ থাকুক ঠোটের কোনে, কুলশীলে বিশুদ্ধ মুক্ত চিল হও, অবধূত!!

আমি ক্ষতের রক্ত চাটতে রাত জাগা নীল-মাছি হবো, অজান্তের ঘুম-ঘোর গোঙানি ভাসুক অনুভূতি-শূন্যতায়, নাতিশীতোষ্ণ মখমলের জোঁনাক স্পর্শে ছায়া-পুরুষ হবো। অণিমা, তুমি আবার বলে উঠো না মূঢ় অক্ষমা তপতীর মন লুটের দস্যু আমি!! আমি সব সময়ের জন্যে শরণাগত ধৃত রুদ্ধ মৌণ কুহর অচ্ছুৎ !!

আলোর সৎকার না হোক অন্ধকার যদি প্রশ্ন করে, তুমি কে? তখন তামসকে বলে দিও আমি কবরস্থানে দেহ-গোড় খুঁড়ার হরিয়াল, সমাজের মাঝে চাকু চালানোর ডোম-চাঁড়াল, অক্ষমতার নীল বিষ তুলে আনা রক্তাক্ত নখ, যে চিৎকার করে বলবে আমি ধর্ষক নই, প্রেমিক এক, অনুসন্ধিতে আমিত্বের চাতক উন্মুখ, দিবাকরের ছায়া তমাল কুজন, সুখ !!

রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১১

কলা পাতার পন্ডিত

স্বগৃহে কথা মালার কল্পিত ঘরে
আজো তোমায় ভাবি
গল্পের মতো।

যখন গোধূলির লালিমা লুটায় ব্যাল-কনিতে
কার্নিশ চুইয়ে নামে স্মৃতি
বোগেনভেলিয়া ছুঁয়ে যায় অধর
ধোঁয়া ওঠা কফি কাপ
ঠাণ্ডা হয়,
আমি বিভোর হই
খরগোশ হয়ে দৌড়ে বেড়াই আবহানী মাঠে
শার্দূল শকুনের ভয় থাকে না
তখন
সোনালী ডানার চিল, হিংসে করে তোমায়
দ্বাররক্ষী যে আমার বন্ধু!!

সন্ধ্যার আঁধার নামে
একটা দু’টো করে সাঁঝ বাতি জ্বলে
জ্বলে ঐ পশ্চিমাকাশের ধ্রুব তারা
ইশারায় বলে
‘ঘরে যাও রাতকে বরণ করো’
ঠিক যেমন তুমি বলতে
মোলায়েম মাখন স্বরের কাঠিন্যে
খুশবু রেস্টুরেন্টে!!

আমি মনে মনে বলতাম
ঈশ কি আমার কলা পাতার পণ্ডিত
আবার শাসন করে,
প্রচণ্ড ভালো লাগায়
তখন আমার কান্নার ঝাঁপি খুলে যেত
টলমল করা জল তোমায় দেখাবোনা বলে
পালিয়ে আসতাম,
পিছন থেকে তোমার চিৎকার
‍”ভালো থাকিস”
সেই শব্দের প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাবার আগেই
আবিষ্কার করতাম নিজেকে ব্যাল-কনিতে।।
সেই মুখ চোরা আমি
আজো তোমায় বলতে পারিনি
ফিরিয়ে দিতে কথা
"তুইও ভালো থাকিস"
লুকিয়ে রাখি নিজেকে
যেমন প্রতিটা মানুষ লুকিয়ে রাখে
মনের ঘর
নিজের একটা কথা বলা ঘর।।

সাতপাঁকে ক্রীতদাসী হবো না

শতরঞ্জিতে বসে সেতার বাজাবো না
সপ্তর্ষির ছায়াপথে স্বপ্নচারিনী হবো না
ঢোল-তবলায় মেঘের গর্জন হবো না
যার তরে সতীত্ব বিকবো, সে হীনা
লগ্নের সাতপাঁকে ক্রীতদাসী হবো না।।

পারস্যের মখমলে ভায়োলে মরূদ্যানের বিষাদ হবো না
পানশালায় ঘুঙ্গুরের রুমঝুমে বিনোদিনী হবো না
বেউড়ের গৃহে গৃহীনি হতে দ্বিধা করবো না।।

বাঁশের বীণায় সর্পিণী দোলায় দুলবো না
সরোদ কিন্নরে কিঙ্কিণী কিঙ্করী হবো না
দুর্দৈবের ব্যঞ্জন হবো না
যে জনে ফলবতী হবো, সে হীনা
বেনারসি সিঁদুরে বস্ত্রাবৃত হবো না।।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১১

পাথরের পরকীয়া পাপ



বুকের জ্বলন নেভে না ক’ফোট নয়না-সারে
স্মৃতির দুয়ারে মাথা-কুটে ভাঙ্গে সব আগর
অ-সন্মানের ধৃষ্টতার দেয়াল ভাঙ্গে না,

স্বর্গের কপাট খুলেছি, দেবী
স্বেচ্ছাচারী বেভুল বসন্তের ছায়ে
গায়ে জড়িয়েছি আজ রঙিন কাফন,

দেহের উষ্ণতা যদি মনের বাহুডোর ডাকে
বুক ভরা অবোধ্য আবেগ যদি উদ্বাহ নৃত্য করে
তবে আর কাব্য লিখে শব্দের অপচয় করবো না

তার চাইতে লাইসেন্স বিহীন দোনলা বন্দুক হবো
আগুন ঝরাবো লিবিয়া, ইরাক কিংবা আফগানিস্তানে
তখন সে শব্দ-গুলো দিয়ে মানবতার গুলি বানিয়ে নিবো,

যে শব্দে বলতাম ভালোবাসি
হর্ষ-বিষাদকে আজ দিয়ে দিলাম ছুটি
কারণ, তুমি আর আমায় ভালো বাসো না।

দুরন্তপনার শিখরে আজ আমি পথভ্রষ্ট লম্পট
আমি দ্যা ভিঞ্চির অসমাপ্ত লেখচিত্র
মেরিলিন মনরোর কামনার হাসি
হোমারের অসমাপ্ত পর্ণো-কাব্য
রুশদির ঈশ্বর ব্যাঙ্গর দোলনা,

আমার কুশপুত্তলিকায় আগুন দিতে আসো
স্বৈরাচারী শাসক উল্লাসে স্মিত হাসুক
নজরুলের বিদ্রোহী উপহাস করুক
রুদ্রের দ্রোহ মুক্ত ফুটপাথে হাটুক
রশিদ ভাইতো আর স্থির চিত্র তুলবে না
ভয় নেই
চলে আসো
একদলা থুতু দিতে
আমি ঘেন্না নিয়ে সুখী হবো।

আমি জেনেছি
উনুনে ক্ষুধার জঠর অঙ্গার হয়
কঙ্কালসার বাদামী-ত্বক ছড়ায় ছিবড়ের শুষ্কতা
বঞ্চিতের বিপ্লব হোক কাব্য শ্লোগানের হাতিয়ার
শোষকের চোখে ছুড়ে দিয়ে দ্বিধাহীন বিষমাখা শব্দ-তীর

কেনো জানো? আমি
ক্লিওপেট্রার হাবশি ক্রীতদাস হবোনা
ডায়ানার মতো পাপারাৎজির দানো হবো না
ফিদা হুসেনের নারীশিল্প দেখে বাহ সুন্দর বলবো না
বনস্পতি ঘ্রাণে সুস্নিগ্ধ আগুনে দেহের ভাঁজ খুঁজবো না
ভর দুপুরের তুমুল যৌবনে সঙ্গমের হাহাকার করবো না
পুংশক-ধর্মে প্লেটোনিক প্রেমের উন্মেষ তুমি’তো আর বোঝো না।

তবু সব ভুলে
আজ যদি স্পস্ট বলি
গেরস্থালীর খুনসুটি থাকুক তোলা
চলো রাধাচূড়া ফাল্গুনের সাথে দেহাতী পথে
নি:সঙ্গ ঘুঘু’রা কান্না করুক ডাহুক কণ্ঠের গানে
প্রেমাষ্পদ রুপোলী চাঁদ নিদারুণ অভিমানী হয়ে যাক
ময়ঙ্ক-বানে মুক্তোদানা জোঁনাকগুলো আজ অন্ধ হয়ে যাক

তুমি কি আসবে?
জানি তুমি আর সাহসী হবে না
তাই, আমার স্বরূপটা’ই বলবত থাক
আমি’তো সৎকার’হীন উঠে আসা চণ্ডাল
অঙ্গে থাকুক মাৎসর্য দাহনের নিপতিত দর্পক
এ সব আজ তোমার কাছে রহস্যের পরকীয়া পাপ
তবে থাক তা যতনে, পাথর হয়ে বহ্নিমান গাত্র দাগ।।